জীবন চন্দ্র। বয়স এখন ৬৫ চলছে। তিন বেলা খাওয়ার জন্য প্রায় ৫০ বছর ধরে মানুষের ছেঁড়া জুতা সেলাই আর পলিশ করে চলছে সংসার। এটাই পেশা। এক ছেলে আর এক মেয়ের বাবা তিনি। প্রায় পাঁচ বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে। জীবনের সংসারে এখন আছেন স্ত্রী ও এক ছেলে। সংসার চালাতে মানুষের ছেঁড়া জুতা সেলাই করেন তিনি। ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সে।
জীবন চন্দ্র বলেন, প্রথম দিকে কয়েক বছর লালমোহন পৌর শহরের চৌরাস্তার মোড়ে টংদোকান বসিয়ে জুতা সেলাই আর পলিশ করতাম। বিগত ৩৫ বছর ধরে লালমোহন ভূমি অফিসের সামনে বসে এ কাজ করছি। সংসারে স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। এই জুতা সেলাইয়ের আয় দিয়ে মেয়েকে বিয়ে এবং ছেলেকে এইচএসসি পাস করিয়েছি। ছেলেকে অর্নাসে ভর্তি করাবো বলে জানালেন তিনি।
জীবন চন্দ্র আরো বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯ টায় এসে দোকান খুলি। আর রাত ৯ টায় বন্ধ করি। এতে গড়ে দৈনিক তিনশত টাকার মতো উপার্জন হয়। যেখান থেকে খরচ বাদে ২২০ টাকার মতো থাকে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ওই টাকা দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার। এছাড়া, একটি হরিজন ভাতা আছে আমার নামে। ওই টাকাও ঠিক মতো পাই না। গত কয়েক মাস আগে ১৫’শ টাকা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর নেই। আমার দাবি; সরকারিভাবে গরীবদের জন্য যে চাল দেওয়া হয় তা যদি আমাকে দেওয়া হতো তাহলে কষ্ট কিছুটা কমতো।
একই হাল লালমোহন ভূমি অফিসের সামনে বসে জুতা সেলাই করা সঞ্জিব ও উকিন্দের। তারাও সেই ছোট্ট বেলা থেকেই জুতা সেলাই আর পলিশ করাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখানে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছেন তারা। অভিযোগ করে তারা বলেন, সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পান না তারা। জীবন চন্দ্র, সঞ্জিব ও উকিন্দের মতো লালমোহনে ২০জন মুচি রয়েছেন। যারা বঞ্চিত রয়েছেন সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে।
এ ব্যাপারে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল জানান, সরকারিভাবে বর্তমানে তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। সামনে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে তা অবশ্যই তাদের মাঝে সঠিকভাবে বন্টণ করা হবে।