মোঃ ছালাহউদ্দিন,মনপুরা
মনপুরা উপজেলার ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন চাইল্ড সেফটি ডিভাইসসহ একাধিক ডিভাইস আবিষ্কার করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। তরুন এই বিজ্ঞানীকে দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ভিড় করছেন। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা ক্ষুদে বিজ্ঞানীর আবিষ্কার দেখে মুগ্ধ।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী আবিষ্কার করে সাড়া ফেলেছেন চাইল্ড সেফটি ডিভাইস। বিচ্ছিন্ন দ্বিপ উপজেলার বিভিন্ন পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল । ঠিক সেই মুহুর্তে দুর্গম উপজেলার মনপুরার মোঃ তাহাসিন নামের এক শিক্ষার্থী আবিষ্কার করল চাইল্ড সেফটি ডিভাইস। প্রায় ৫০ গ্রাম ওজনের এই ডিভাইসটি যে শিশুটি ব্যবহার করবে সেই শিশুটি পানিতে ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে শিশুর অভিবাবকের মোবাইলে কল চলে যাবে এবং তার বাসায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এলাম বেজে উঠবে।পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুটি ওই মুহুর্তে কোথায় আছে তাও জানাযাবে ডিভাইসের মাধ্যমে। এতে করে পুকুরের পানিতে পরে গেলেও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে ডিভাইস ব্যবহারকারী শিশুটি। এভাবে কমে আসতে পারে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার ।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন আরও আবিষ্কার করেছেন লাইফ সেফটি ডিভাইস। এই ডিভাইস ব্যবহারকারীর উপর কেউ হামলার চেষ্ঠা করলে হামলাকারী ২৫০ থেকে ৩৫০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক শক পাবে। এছাড়াও ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন আবিষ্কার করেছেন ফার্মার সেফটি মেশিন। এটি ব্যবহার করলে একজন কৃষক রোদে ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে। আবিষ্কার করেছেন ফার্মার হেল্পার মেশিন। এই ডিভাইস ব্যবহার করলে কৃষকেরা পরিমান মত সার প্রয়োগ করতে পারবেন। কমপক্ষে ৫জন কৃষকের কাজ একাই এই মেশিন করতে পারবেন। এটা ব্যবহার করা খুব সহজ ও পরিবেশ বান্ধব। এছাড়াও ক্ষুদে বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন ফার্মার এসিস্ট্যান্ট মেশিন,স্মার্ট থিপ টব
সিকিউরিটি,র্স্মাট হর্ণ,র্স্মাট ডাস্টবিন,র্স্মাট ওয়াটার টেপ,ডোজ এলার্ম গøাস,র্স্মাট বৈদ্যুতিক টেস্টার ,অটোমেটিক কাটেইন অফেনার ও র্স্মাট শিপ স্টেবিলাইজার। নিজের প্রচেষ্টায় নতুন নতুন আবিষ্কারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তরুন এই ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন উপজেলার ২নং হাজির হাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনপুরা ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম মাষ্টারের ছেলে। ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিন বলেন, ছোট বেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। লেখা পড়ার পাশাপাশি অবসরে সে উদ্ভাবনী বিষয়ে সময় কাটায়। তার এই আবিষ্কারে এলাকাবাসী খুবই খুশি। এই শিক্ষার্থী আবিষ্কার ও উদ্ভাবনীতে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগীতা পেলে ক্ষুদে বিজ্ঞানী একদিন দেশের মুখ উজ্জল করবে বলে এলাকাবাসী জানান। ক্ষুদে বিজ্ঞানী আরও বলেন,আমার পরিবার আর্থিকভাবে তেমন সচ্চল নয়। আমার বাবা মা আমাকে কোন কিছু খাবরের জন্য টাকা দিলে সেই টাকা না খেয়ে আমি নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য ব্যয় করি।
তাহাসিন বর্তমানে ঢাকা মটস ইনস্টিটিউট অব টেকনলোজি এর ইলেক্ট্রিকাল ডিপার্টমেন্টের প্রথম সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী।
তাহাসিন এর বাবা আব্দুল হালিম মাষ্টার বলেন,ছোট বেলা থেকে তাহাসিনের স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। আমরাও তার এই আবিষ্কার দেখে মুগ্ধ। আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী সহযোগীতার চেষ্ঠা করছি।
২ নভেম্বর শনিবার মনপুরার ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনের উদ্ভাবনীর উদ্ভোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় ছাত্র ছাত্রী ও এলাকার লোকজন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)পাঠান মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার((ইউএনও) পাঠান মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান বলেন, ২ নভেম্বর ক্ষুদে বিজ্ঞানী তাহাসিনের বিভিন্ন উদ্ভাবনী দেখেছি। সবগুলো উদ্ভাবনী খুব সুন্দর হয়েছে। সবগুলো উদ্ভাবনী ভালো ছিল। মনপুরার মত বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ উপজেলায় তাহাসিনের মতো একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও ক্ষুদে বিজ্ঞানীর এমন উদ্ভাবনী সত্যি খুব প্রশংসনীয়। সে এলাকায় একটি বিজ্ঞান ক্লাব করার কথাও ভাবছে। পড়ালেখার পাশাপাশি তার সকল ভালো কাজে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করব। ক্ষুদে বিজ্ঞানীর সাফল্যও কামনা করেন ইউএনও।