দ্বীপকন্ঠ নিউজ ডেস্কঃ
মো. শওকত আরিফ। তিনি পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। চাকরি করেন রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। শওকত আরিফ ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়েস্টার্ণ পাড়া এলাকার সাবেক কমিশনার মো. আমজাদ হোসেন আলমের ছেলে।
শওকত আরিফ একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হয়েও করে যাচ্ছেন অনন্য এক মানবিক কাজ। তিনি কোনো গরীব-অসহায় মানুষের মৃত্যুতে বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন লাশ দাফনের পুরো সামগ্রী। যুবক শওকত আরিফ তার এই মানবিক কার্যক্রমকে পরিচালনা করতে করেছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যার নাম দিয়েছেন ‘লাস্ট ড্রেস বাই শওকত’। এই সংগঠনের মাধ্যমেই তিনি লাশ দাফনের সকল সামগ্রী প্রদান করেন।
যুবক শওকত আরিফ জানান, একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের স্বপ্ন থাকে তিনি একটি নিজস্ব ব্রান্ড তৈরি করবেন। যা বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করবে। এর ফলে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হওয়া যাবে। তবে আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হয়েও চিন্তা করেছি ব্যতিক্রম কিছু করার। সেই চিন্তা থেকেই চালু করেছি ‘লাস্ট ড্রেস বাই শওকত’ এর। আমি সমাজের গরীব-অসহায় মানুষের মরদেহ দাফনের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছি দাফনের সব ধরনের সামগ্রী। নীরবেই গত তিন বছর ধরে কাজটি করছি। তবে গত অক্টোবর মাস থেকে আমি এখন প্রকাশ্যেই এই কাজ করছি।
তিনি জানান, আমি বিভিন্ন সময় দেখেছি অনেক গরীব-অসহায় মানুষের মরদেহ দাফনের জন্য প্রতিবেশীদের কাছে চাঁদা তুলতে। চাঁদা তুলে ওই অসহায় মানুষের মরদেহ দাফনের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী কিনে তারপর লাশ দাফন করা হতো। তখন থেকেই বিবেকের তাড়নায় এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে নিজেই অসহায় এবং গরীব মানুষের শেষ সময়ে যেন দাফনের জন্য চাঁদা তুলতে না হয়, সেজন্যই এই কার্যক্রম শুরু করেছি। আমার এই কার্যক্রম কেবল নিজ উপজেলা লালমোহনেই নয়, এটি পুরো দেশব্যাপী চালাবো। তবে লালমোহনের কেউ আমার থেকে বিনামূল্যে দাফনের সামগ্রী নিতে চাইলে স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা খতিবের একটি প্রত্যয়নপত্র নিয়ে পৌরশহরের মসজিদ মার্কেটের নূরানী কুতুবখানায় গেলেই সবকিছু পেয়ে যাবেন। জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা খতিবের প্রত্যয়ন না নিয়ে গেলেও এই সামগ্রী দেওয়া হবে। তবে দাফনের ওইসব সামগ্রী নেওয়ার সময় নূরানী কুতুবখানা থেকে একটি ফরম নিয়ে সেটি পূরণ করে পরে এসে জমা দিলেও হবে।
তিনি আরো জানান, এছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে দাফনের এই সামগ্রী বিনামূল্যে নিতে ফেসবুকে খধংঃ উৎবংং ইু ঝড়শিধঃ এই পেইজে যোগাযোগ করেও যে কেউ গরীব-অসহায় মানুষের শেষ বিদায়ের এই সামগ্রী নিতে পারবেন। একইসঙ্গে কোনো মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কোরআন শরীফের দরকার হলে তাও আমি বিনামূল্যেই দিয়ে থাকি। এই কার্যক্রম পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে চালাচ্ছি। কারণ আমি চাই সব জায়গায় মানবিকতা ছড়াক, পৃথিবী হয়ে উঠুক মানবিক, প্রত্যেক মানুষও হোক মানবিক।
যুবক মো. শওকত আরিফের এই কাজের প্রশংসা করেছেন লালমোহন উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার মো. আল-মামুন। তিনি বলেন, এটি ইসলামিক দিক থেকেও একটি সুন্দর এবং মানবিক কাজ। তার এই কাজের জন্য আমি তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া তিনি আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করলে তার এই কাজকে আরো গতিশীল করতে আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে নিয়ে এ তথ্য তুলে ধরবো। যার মাধ্যমে কোনো গরীব-অসহায় মানুষের জন্য আর দাফনের সামগ্রী কিনতে কষ্ট বা চাঁদা তুলতে হবে না।