দ্বীপকন্ঠ নিউজ ডেস্কঃ
ভোলার লালমোহনের অন্তঃসত্ত¡া মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে অসহায় বাবা-মা। মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে এখনও বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। এ যেন দেখার কেউ নাই। এবিষয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলেও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেন বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, লালমোহন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ ফজলুর মেয়ে রিতু (২০) এর সাথে প্রায় আড়াই বছর আগে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সুলতান মুন্সি বাড়ির আবুল কালাম এর ছেলে মো: নকিব এর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে রিতু তার শ্বশুর বাড়িতে থাকতো। স্বামী নকবি জীবিকার তাগিদে সাদিক এগ্রোতে ড্রাইভারিং চাকরী করার কারণে ঢাকাতে থাকতেন। একই বাড়ির বাবুলের ছেলে রাকিবও ঢাকায় থাকার কারণে তার স্ত্রী তামান্নার (চাচাতো জা) এর সাথে রিতুর সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ রিতু তামান্নার উঠা বসা ও চলা ফেরা এবং সু-সম্পর্কের বিষয়টি মানতে নারাজ ছিলেন তামান্নার শ্বশুর বাবুল ও তার পরিবারের লোকজন। এ ঘনিষ্ঠতা যেন রিতুর জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
নিহত রিতুর বাবা মো: ফজলু অভিযোগ করেন, তার মেয়ে রিতু ৬ মাসের অন্তঃসত্ত¡া ছিলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং রাতে রিতু তামান্নার সাথে কথা বলার অজুহাতে বাবুল ক্ষিপ্ত গালিগালাজ করে এবং ঘরে এসে শাকিব, রাকিব, কামাল, জনয়ব, খতেজাসহ আমার মেয়েকে বেধরক পেটাতে থাকে। একপর্যায় তাদের পিটুনীতে আমার মেয়ে মারা গেলে তারা লাশ ঘরের চৌকির ওপর আড়ার সাথে উড়না গলায় পেছিয়ে রিতুকে ঝুলিয়ে রাখে। ভোর রাতে খবর পেয়ে আমরা ছুটে আসি।
নিহতের মা কুলছুম জানান, রিতুর ডান হাতের কব্জি ও বাম পা ভাঙ্গা ছিলো। কপালের বাম পাশের ওপরে রক্ত জমাট এবং বাম হাতের কব্জির নিচে ও পিঠে, গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাদের পিটুনিতে রিতু প্রস্রাব করে দেয়। আমার মেয়েকে তারা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
নিহতের শ্বশুর আবুল কালাম অভিযোগ করেন, রিতুর সাথে তামান্নার চলা ফেরা বন্ধ করতে না পেরে তার ভাই বাবুল ও তার পরিবারের লোকজন রিতুকে আরো কয়েক বার ঘরে এসে মারপিট করেছে। ওই দিন রিতু একা ঘরে ছিলেন। ঘটনার দিন আমার ছেলের বউ রিতু তামান্নার সাথে দেখা করেছে বলে বাবুল আমার ঘরে ঢুকে শাকিব, রাকিব, কামাল, জনয়ব, খতেজাসহ রিতুকে মারধর করে এবং আমার ঘরের দরজা ভাংচুর করে। তাদের পিটুনীতে রিতু মারা গেলে তারা আড়ার সাথে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। আমি এসে দেখি আমার ঘরের দুই দরজা খোলা এবং রিতু আড়ার সাথে ঝুলে আছে দেখে চিৎকার দিলে তামান্নাসহ রিতুকে জীবিত ভেবে নিচে নামিয়ে রাখি।
রিতুর স্বামী নকিব অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন তিনি ঢাকাতে ছিলেন। খবর পেয়ে লঞ্চে উঠে বাড়িতে চলে আসেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীকে পরিকল্পতি ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় তিনি গত ২২ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে বোরহানউদ্দিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামালা দায়ের করছে। যার মামলা নং এম.পি ২৬৩/২৪ (বোর:)। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়া চেষ্টা করছে। এত বড় ঘটনা ঘটিয়েও আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে বিভিন্ন ভাবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
একই বাড়ির কাশেম ও খাদিজা জানান, রাতের বেলা রিতু ও তামান্না দেখা করায় তামান্নার শশুর বাবুল ও শাকিব রিতুকে গালিগালজ ও হই চই করতে শুনেছি। পরে আমরা ঘুমিয়ে যায়।
পার্শ্ববর্তী রিনা ও মো: বাবুল জানান, রাতে হই চই শুনেছি। পরে এসে দেখি রিতুর লাশ নিচে পরে আছে। লাশের হাতে ও মাথায় এবং শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। এতে মনে হয়েছে এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু ।
অভিযুক্ত তামান্না বলেন, আমার আর রিতুর চলা ফেরা উভয় পরিবারের লোকজন পছন্দ করতো না। ঘটনার দিন রাত ১০ টার দিকে রিতু আমার সাথে দেখা করার জন্য আমার শশুর (বাবুল) এর ঘরে আসে। রাত ১২ টার দিকে রিতু চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বাহিরে আমার শশুর (বাবুল) এর গালি গালাজ হই চই করতে শুনেছি। ভোর রাতে রিতুর শ্বশুরের চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি রিতু আড়ার সাথে ঝুলে আছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাবুলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই জিএম শাহাবুল বলেন, এ ঘটনায় ভিক্টিমের স্বামী আদালতে একটি হত্যা মামলা করায় আদালত থানাকে তদন্ত দিলে থানা থেকে আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হয়েছে। লাশ থেকে আলামত সংগ্রহ করে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য খুলনা ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। ভিসেরা ও ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসলে বলা যাবে এটি কি হত্যা না আত্মহত্যা। লাশের হাত পা ভাঙ্গা ও শরীরে জখম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি সুরতহাল রিপোর্টে ভুল করলেও সঠিকটা ময়না তদন্তের রিপোর্টে তা চলে আসবে। রিতুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিষয়টি মোবাইল ফোনে বলা যাবে না বলে এড়িয়ে যান তিনি।
বোরহানউদ্দিন থানার ওসি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।