এস এম আলমগীর হোসেন, কলাপাড়াঃ
ধুয়ে মুছে যাবে জাগতিক পাপ, এ বিশ্বাস নিয়ে ভরা পূর্ণিমা তিথিতে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা কুয়াকাটায় সমুদ্রে গঙ্গাস্নান করবে। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আগামী শুক্রবার সেই পূর্ণিমা তিথিতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এ উপলক্ষে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। আর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে ব্যাপক। ইতিম্যধে পৌর সভার পক্ষ থেকে চলছে পরিস্কর পরিছন্নতার কাজ। একই সাথে ফগার মেশিন দিয়ে সৈকতের জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্পটে ছিটানো হচ্ছে মশা নিধনের ঔষধ। প্রায় ২০০ বছর ধরে কুয়াকাটায় সমুদ্রের নীল জলে গঙ্গাস্নান ও কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে এমনটাই জানিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এদিকে রাস ও গঙ্গাস্নান উদযাপনের লক্ষে সোমবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতিমুলক সভা। এতে সভাপত্বিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো.রবিউল ইসলাম। এ সময় কলাপাড়া সেনা ক্যাম্প ক্যাপ্টেন শাবাব আহমেদ, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদারসহ রাস উদযাপন কমিটি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আগত দর্শণার্থী, পুনার্থী, ভক্ত বৃন্দদের সুপেয় পানি ও পয়নিস্কাসন ব্যবস্থাসহ আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। তবে পদ্মা সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এবছর ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটবে এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
পঞ্জিকা মতে, আগামী বৃহস্পতিবার শেষ রাত ৫ টা ৪৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে শুরু হবে পূর্ণিমা। আর থাকবে পরদিন শুক্রবার রাত ৩ টা ৩২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড পর্যন্ত। এই তিথিতেই বিশাল সমুদ্রে পূণ্যস্নান করবেন সনাতনীরা। আগমুহুর্তে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন। এর পরে ওইসব পুণ্যার্থীরা দলবেঁধে কলাপাড়া পৌর শহরের আন্দার মানিক নদীর তীরে অবস্থিত শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের আঙ্গিনায় রাস মেলায় মিলিত হবেন এবং ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন। এ মেলা চলবে পাঁচ দিনব্যাপী।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে এবং দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবর্তীন হন। গোপিনীদের নাচ ও শ্রী কৃষ্ণের সুমধুর বংশী ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল বৃন্দাবনের পবিত্র ভ‚মি।
পরবর্তীকালে শ্রী রাধা কৃষ্ণের এই মিলন উৎসবকে শ্রী চৈতন্যদেব নাম-সঙ্কীর্তনের মধ্য দিয়ে রাস মহোৎসবে পরিণত করেন। তিনি যে সর্বভূতে বিরাজ করেন, তারই সাক্ষী রেখেছেন পূর্নিমা তিথিতে এ রাস লীলার মাধ্যমে। সেই লীলা অনুসরণ করে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম আঙ্গিনায় রাস মেলা ও কুয়াকাটার গঙ্গাস্নান চলে আসছে।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম প্রহিত পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, শতশত বছর ধরে এই পূর্ণিমা তিথিতে কুয়াকাটায় গঙ্গা স্নান ও কলাপাড়ায় রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই তিথিতে সাগরে পূণ্যস্নান করলে পাপ দুর হয় এবং মানুষের কল্যাণ হয়।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড.নাথুরাম ভৌমিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে অধিবাসের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাস লীলা উৎসব ও মেলার অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এ রাস উৎসব চলবে পাঁচদিন ব্যাপী। ইতোমধ্যে মন্দির প্রাঙ্গণে দোকানিরা বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছে। এছাড়া পুরো মন্দির এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম স্বার্বক্ষনিক টহলে থাকবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি বৃহৎ উৎসব রাস উৎসব। সেটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে উদযাপিত হয়ে থাকে এবং কলাপাড়া মদন মোহন সেবাশ্রমে পূজা অর্চনা হয়। তিনি ধারণা করছেন এ উৎসবকে ঘিরে তিন লক্ষাধিক পুন্যার্থীদের সমাগম ঘটতে পারে। এজন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী,পুলিশ,টুরিস্ট পুলিশ, গ্রাম পুলিশ সহ ৫ শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। আগত পূর্ণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি। এছাড়া ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলায় প্রস্তুুতিমূলক সভা হয়েছে। আশা করি সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে এই উৎসব উপহার দিতে পারব।